শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফোর্বসের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একসময় বিশ্বে রোল মডেল হবে চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপির সর্বোচ্চ ৩৮৮০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এলজিইডি বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দুবাইয়ে বিদেশীদের গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশীও সেলিম প্রধানকে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের নির্দেশ বহাল ফের আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় উপজেলা নির্বাচন জনগণের সাথে প্রতারণা করার নির্বাচন : রিজভী মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক
‘একটি অন্যায় ঢাকতে গিয়ে কক্সবাজারের জেলা জজ কয়েকটি অন্যায় করেছেন’

‘একটি অন্যায় ঢাকতে গিয়ে কক্সবাজারের জেলা জজ কয়েকটি অন্যায় করেছেন’

স্বদেশ ডেস্ক:

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেছেন, তিনি তার আদেশ নিজেই কেটে দিয়েছেন। এই ঘষামাজা ভুল নয়, এটা অপরাধ। এটি করতে তার বুকও কাঁপেনি। একটি অন্যায় ঢাকতে গিয়ে তিনি আরও কয়েকটি অন্যায় করেছেন। এ সময় তার আইনজীবীরা ক্ষমা চাইলে হাইকোর্ট বলেন, আপনারা ক্ষমা চাইছেন। অনুতপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু জেলা জজের মধ্যে তো কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি অনুতপ্তও নন। মন থেকে অনুশোচনা আসতে হয়। গতকাল বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক শুনানিতে এসব কথা বলেন।

হাজতে না গিয়েও হাজতবাসের বিবরণ উল্লেখ করে এক মামলায় ৯ আসামিকে জামিন দেয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ হাইকোর্টে  দ্বিতীয় দিনের মতো হাজির হন মোহাম্মদ ইসমাইল।দ্বিতীয় দিনেও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে ভর্ৎসনা করেন উচ্চ আদালত। এর আগে গত বুধবার মোহাম্মদ ইসমাইলের লিখিত বক্তব্যসহ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি হলফনামা আকারে হাইকোর্টে দাখিল করেছিলেন তার আইনজীবী। কিন্তু যথাযথ না হওয়ায় তা নতুন করে দাখিলের জন্য সময় চেয়ে সেদিনই তার আইনজীবী হাইকোর্টে আরজি জানান। পরে আদালত শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন। গতকাল  সকালে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নতুন করে একটি আবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আইনজীবী। পরে আদালত এই মামলার শুনানি ২৭শে জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করেছেন।

 

শুনানিতে জেলা জজের আইনজীবী এডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, আমরা কনটেস্ট করতে চাই না। আমরা আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা খুবই অনুতপ্ত। এ পর্যায়ে হাইকোর্ট জেলা জজকে ডায়াসের সামনে ডেকে আদেশ টেম্পারিংয়ের বিষয়ে জানতে চান। তখন জেলা জজ বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। একপর্যায়ে বলেন, ভুলে এটা হয়েছে। তখন আদালত বলেন, আপনি ভুল করেননি। আপনি জেনে বুঝে ক্রাইম করেছেন। এ সময় তার আইনজীবীরা আবারো ক্ষমা চাইলে হাইকোর্ট বলেন, আপনারা ক্ষমা চাইছেন। অনুতপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু জেলা জজের মধ্যে তো কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি অনুতপ্তও নন। মন থেকে অনুশোচনা আসতে হয়।

শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট মোহাম্মদ ইসমাইলের দেয়া আদেশের অংশবিশেষ আইনজীবীদের দেখতে বলেন। হাইকোর্ট বলেন, আদেশে কিছু পরিবর্তন করতে হলে সবপক্ষকে ডেকেই করতে হয়। হাইকোর্টে আসার আগেই তিনি তার আদেশ কেটেছেন। এ সময় জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, আদেশে দুটি শব্দ ভুল হয়েছে। এ জন্য মাফ চাই। দুঃখিত। হাইকোর্ট বলেন, আপনি খণ্ডন (আদেশ) করতে চাচ্ছেন? আপনার মনে অনুতাপ দেখি না। আপনি বাধ্য হয়ে বলছেন। অন্তর থেকে আসেনি। অন্তর থেকে আসতে হবে। শুনানির একপর্যায়ে তিনি বলেন, তার খারাপ লাগছে। আদালত তাকে বসতে বলেন। শুনানির একপর্যায়ে মোহাম্মদ ইসমাইলের অপর আইনজীবী আদালতে ৭ দিনের সময়ের আরজি জানান। আদালত ২৭শে জুলাই শুনানির পরবর্তী তারিখ রাখেন।  শুনানি শেষে আদালত কক্ষ থেকে বের হলে সাংবাদিকরা তার বক্তব্য জানতে চান। তখন তিনি বলেন, আল্লাহপাকের কাছে বিচার দিলাম। যা করার আল্লাহপাক করবেন। আল্লাহপাক ভালো বোঝেন।

নথি থেকে জানা যায়, হাজতে না গিয়েও হাজতবাসের বিবরণ উল্লেখ করে এক মামলায় ৯ আসামিকে জামিন দেয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে গত ২১শে জুন তলব করেন হাইকোর্ট। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি একটি জমির দখল নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে নালিশি মামলা করেন।

১১ই এপ্রিল এ মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করলে হাইকোর্ট তাদের ৬ সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুসারে ২১শে মে আসামিরা ওই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। সংশ্লিষ্ট আদালত ৯ আসামিকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর বিরুদ্ধে ওইদিনই আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন (ফৌজদারি রিভিশন) মামলার বাদী খোদেস্তা বেগম। আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন বলেন, জেলা জজ আদালতে জামিন আবেদনের সঙ্গে হাকিম আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্যান্য কাগজপত্রের প্রত্যায়িত অনুলিপি বা প্রত্যায়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। তারপরও জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন। হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় আসামিদের জামিন মঞ্জুর করা হয় বলে আদেশে উল্লেখ করেন জেলা জজ। অথচ ৯ আসামি এক মুহূর্তও হাজত বাস করেননি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877